মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৫:৪০ অপরাহ্ন

আওয়ামী লীগ-বিএনপির নজর ছোট দলগুলোয়

আওয়ামী লীগ-বিএনপির নজর ছোট দলগুলোয়

স্বদেশ ডেস্ক:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৩ সালের শেষে বা ২০২৪ সালের শুরুতে। দেড় বছরের মতো বাকি থাকলেও এ নির্বাচন নিয়ে এখনই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। কথা বলছে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোও। নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়েই মূলত এ আলোচনা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে- নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপির সিদ্ধান্ত তারা শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাদের দাবি- অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে হলে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত এবং সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা ও তৎপরতার মধ্যে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ‘নিবিড় ও আস্থার’ সম্পর্ক গড়তে কাজ করছে। উভয় দলই ডান-বাম দলগুলোর প্রতি বাড়তি নজর রাখছে। আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ও উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নির্বাচনী জোট বড় করার কথা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচনী জোট বড় করার

পক্ষপাতী। তিনি বলেন, অনেক দল আছে যাদের দেশব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা নেই; কিন্তু ওই সব দলের প্রধানদের সমাজে গ্রহণযোগ্যতা আছে। এমন দলকে নেওয়া যেতে পারে।

একাধিক সূত্রমতে, কিছু দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে আলোচনা চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের প্রতি যাদের নিখাঁদ ভালোবাসা আছে, তাদের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে দলটি। তবে এখনো জোট গঠনের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতির খবর নেই। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, নির্বাচন ঘিরে জোট করা না করা একটা রাজনৈতিক দলের জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগে জোটের পরিসর বৃদ্ধির মতো দৃশ্যমান কিছু হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

অন্যদিকে বিএনপি দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২৪ মে থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে। এর মধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব সংলাপ করেছেন। ২০-দলীয় জোটের শরিক লেবার পার্টি ও কল্যাণ পার্টির সঙ্গেও সংলাপ করেছেন তিনি। আগামীতে জামায়াতে ইসলামী, সিপিবিসহ আরও কিছু দলের সঙ্গে বিএনপি সংলাপ করবে। রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, মোস্তফা মহসীন মন্টুর গণফোরামসহ আরও কয়েকটি দল ও সংগঠনের সঙ্গেও পর্যায়ক্রমে সংলাপ হবে।

এর আগে সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও বাসদের খালেকুজ্জামানের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা হয়েছিল। সম্প্রতি দল দুটির নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। এখন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা দল দুটির সঙ্গে নতুন করে কথা বলার চিন্তা করছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। এ ধরনের সরকার নিজে থেকে ক্ষমতা ছেড়ে দেয় না। এটি আদায় করে নিতে হয়। এ জন্য আমরা ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ডান-বাম সবাইকে নিয়ে সরকার পতন আন্দোলন জোরদার করতে চাই। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, আওয়ামী লীগকে সরে যেতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে দায়িত্ব দিতে হবে এবং সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।

জোট বড় করবে আওয়ামী লীগ

আগামী নির্বাচন ঘিরে ইশতেহার তৈরি, প্রার্থী বাছাইসহ নানাবিধ কার্যক্রম নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী জোট নিয়ে ভাবছে দলটি। বিগত নির্বাচনের চেয়ে আরও বড় পরিসরের কথা ভাবছেন তারা। ফলে দীর্ঘদিন আলোচনার আড়ালে থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আলোচনা যতই বাড়ছে, ততই ছোট দলগুলোর কদর বাড়ছে। ছোট দলগুলোও সভা-সমাবেশ করে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য বলেন, নির্বাচনী জোট গঠনে বাম ও ডান উভয় দিকে আওয়ামী লীগের নজর আছে। জাতীয় পার্টি অতীতেও সঙ্গে ছিল। হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। বাম ও ডান দলগুলোকে আওয়ামী লীগের জোটে আসতে হলে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অনুগত থাকতে হবে।

আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিম-লীর সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, নির্বাচনী জোট ঘিরে ধর্মভিত্তিক দলগুলো বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। ধর্মভিত্তিক দলগুলো ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট নিয়ে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করবে। কেউ কেউ ধর্মের নামে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে। এ জায়গায় সতর্ক অবস্থানে থেকে কিছু ধর্মীয় দলকে জোটে আনার চেষ্টা চলছে। তবে এখনো এ চেষ্টা আলোর মুখ দেখেনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, আগামী নির্বাচন ঘিরে কেউ যদি স্বেচ্ছায় আমাদের জোটে আসতে চায়, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ ভাববে। আওয়ামী লীগের চিন্তা-চেতনার সঙ্গে মিললে অবশ্যই তাদের স্বাগত জানানো হবে। তবে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে সাংঘর্ষিক এমন দলকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানাবে না।

অবশ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের বক্তব্য একটু ভিন্ন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে আছে এবং জনগণই আওয়ামী লীগের প্রথম ও শেষ আস্থা। সদস্যহীন এক ব্যক্তি বা এক পরিবারকেন্দ্রিক প্যাডসর্বস্ব দল দিয়ে নির্বাচনে কী হবে তা আমাদের জানা নেই।

এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে দেশগুলো সফর করেছে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল। যুক্তরাষ্ট্র সফর সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান বলেন, দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

আস্থায় জোর বিএনপির

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বৃহত্তর ঐক্যের আগেই সমমনা দলগুলোর মধ্যে আস্থার সম্পর্ক স্থাপন জরুরি। কেন ও কী লক্ষ্য সামনে রেখে বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হবে, কী ধরনের কর্মসূচিতে তারা রাজপথে নামবে এবং ভবিষ্যতে সরকার গঠন ও রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারগুলো কোন কোন জায়গায় হবে- এসব বিষয়ে ঐকমত্য হওয়া জরুরি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ বিষয়গুলো বিএনপি খোলামেলা আলোচনা করছে এবং দলগুলোকে আস্থায় আনার চেষ্টা করছে। এর পর ঐক্যবদ্ধভাবেই সরকারের ওপর চাপ তৈরির কৌশল ঠিক করা হবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, নতুন করে শুরু হওয়া সংলাপে সমমনা রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোকে বিএনপি এ বার্তা দেবে যে তারা বর্তমান রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তন চায়। কিন্তু এই কাজ তাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সমমনা সব দলকে সঙ্গে নিয়েই বিএনপি কাজটি করতে চায়। এ লক্ষ্যে দলগুলোকে আশ্বস্ত হওয়ার মতো কথা দিচ্ছে বিএনপি। এ পর্যন্ত পাঁচটি দলের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে সংলাপ হয়েছে। এর মধ্যে নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ে গিয়ে সংলাপ করেছে বিএনপি। সংলাপ শেষে এসব দল সরকার পতনে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করতে একমত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বাকি দুটি দল লেবার পার্টি ও কল্যাণ পার্টি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে সংলাপে অংশ নিয়েছে। তারাও সরকার পতন আন্দোলন জোটগত বা যুগপৎ হোক, তাতে থাকার ঘোষণা দেন।

সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্ক ও অস্ট্রেলিয়ার কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক তৎপরতার ওপরও নজর রাখছে দলটি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877